Last Updated on November 2, 2021 by SM Toukir Ahmmed
এই কারৌনাকালিন সময়ে একটা প্রক্রিয়া, ধারনা, মাধ্যম নিয়ে আংশিক আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। এমন কি কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের একটি সনামধন্য টেলিভিশনের টোক শৌ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছিলো। আর এই প্রক্রিয়া টি নিয়ে প্রশ্ন প্রায় অনেক মানুষের মনেই আসাটা স্বাভাবিক। সেটা হচ্ছে এই যে, গত একশত বছরে কারৌনাভাইরাস এর মতো প্রাকৃতিক কয়েকটি মহামারি দেখা গিয়েছে। তাই এই তথ্যের, যুক্তির, ধারনার ভিত্তিতে যদি মানুষ, নেতা, দেশ, সংস্থা কোনো প্রস্তুতি, পরিকল্পনা নেয় আর যদি সকল কে সচেতন হতে বলা হয় তাহলে কি সেটা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে কিনা! আরো পরিষ্কার করে বললে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ভাবে অথবা ব্যাক্তিগত ভাবে এটা প্রচার করা যাবে কিনা যে গত একশত বছরে একবার করে মহামারী দেখা গিয়েছে তাই আগামী একশত বছরে নুন্যতম একবার কারৌনাভাইরাসের ন্যায় মহামারীর প্রকোপ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সাবধান! এই সাবজেক্ট-ম্যাটার নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের আসলে বুঝতে হবে আমাদের সব কিছু একটা প্রক্রিয়া-পদ্ধতির মধ্যে চলে থাকে। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে। আর মানুষের অন্যতম কাজ হলো এটা খুজে বের করা যে এগুলো কীভাবে কাজ করে, কোন প্রক্রিয়ায় কাজ করে, কখন, কোথায় কাজ করে। সব কিছু যে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে, এইটা নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটা বড় নিয়ামাত।
এখানে এই বিষয় নিয়ে চিকিৎসা প্রক্রিয়া, গোয়েন্দা প্রক্রিয়া, মানসিক প্রক্রিয়া, সামাজিক প্রক্রিয়া, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এবং ধর্মীয় প্রক্রিয়াকে মাথায় রেখে ফিলোসফিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘গত একশত বছরে একবার করে মহামারী হয়েছে তাই আগামী একশত বছরেও একবার করে হবে অথবা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’ এমন ধারণা ইসলাম সমর্থন করে কিনা সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে এমন তত্ত্ব কারা দিচ্ছেন, কোথায় দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন এবং কখন দিচ্ছেন তার উপর।
এই যে গত মাসে, বছরে হয়েছে তাই এই বছরেও হবে এমন ধারণা আমাদের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে দুবার পরীক্ষা নেওয়া হয় একটি হলো বছরের মাঝামাঝি এবং আরেকটি হলো বছরের শেষে যেটা বার্ষিক পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত। তাহলে নতুন শিক্ষার্থী যদি জিজ্ঞাসা করে তার পরীক্ষা কবে! তাকে নিশ্চয়ই স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেওয়া হবে জুন মাসে। এখন যদি উত্তরদাতাকে প্রশ্ম করা হয় তিনি জানলেন কিভাবে, তাহলে তার উত্তর নিশ্চয় হবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে এমনভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর এই যুক্তি নির্দেশ করে “হয়ে এসেছে তাই হবে” এমন ধারণা কে।
মানুষ সব কাজ করে ভবিষ্যৎ কে কেন্দ্র করে, তাকে এইভাবেই পরিচালনা করতে হয় সব কিছু। এখন এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কত দিনের, মাসের, বছরের তা নির্ভর করে সেই ব্যাক্তির পদবী, দায়িত্ব এবং প্রতিষ্ঠানের উপর। সত্যিকার অর্থে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা অসম্ভব কিন্তু মানুষ সব কিছু সচল রাখার জন্য সকল প্রকার কার্যক্রম ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে করে শুধুমাত্র তার কার্যক্রম গুলোকে নির্ধারণ করার মাধ্যমে, ভবিষ্যৎ কে নির্ধারণ করার মাধ্যমে নয়। আরো সহজ ভাবে বললে, মানুষ তার কাজ নির্ধারণ করার চেষ্টা করে ভবিষ্যৎ কে নয়। একজন ভালো ছাত্র ভালো রেজাল্ট করার জন্য সারা বছর অনেক প্ররিশ্রম করেছেন। কারণ তার লক্ষ হলো তিনি বছর শেষে ভালো রেজাল্ট করবেন। এখন এই এক বছরে তার সাথে কী হবে তা কেউ জানেনা; জানার প্রয়োজনও নেই। তিনি বছর শেষে ভালো রেজাল্ট করলেন এর মানে তিনি তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করলেন এবং পরিশেষে তার ফল পেলেন। এই এক বছরে তার অনেক কিছু হয়েছে, তিনি এক্সিডেন্ট করেছেন, তার পরিবারের সদস্য মারা গিয়েছে আরো অনেক কিছু ঘটেছে তার সাথে। যা ঘটার তা ঘটবেই কিন্তু তিনি হতাশ হননি, ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন এবং ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছেন। তাহলে তার কার্যক্রম গুলো ঠিক করেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন।
এখন যে রাষ্ট্র, জাতি, মানুষ, প্রতিষ্ঠান এই কাজ গুলো কে পরিকল্পনা আলোকে সাজাতে পারে এবং বাস্তবায়ন করতে পারে তারাই এগিয়ে থাকে। কোনো কিছু করার প্রয়াস করা মানেই ভবিষ্যৎ। আমি এই লেখাটি লেখা শুরু করেছি ১০ ফেব্রুয়ারী রাত তিনটায়, লেখার চিন্তা করেছি ২০২০ সালের অক্টৌবারে আর শেষ করেছি ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী বিকাল চারটায়। সুতরাং পরিকল্পনা গ্রহণ করা থেকে এই পর্যন্ত হলো আমার ভবিষ্যৎ। প্রতিটি সেকান্ড ভবিষ্যতের অন্তর্গত কারণ কেউ মৃত্যু গ্রহণ যেকোনো মুহুর্তে, সেকান্ডে করতে পারে। তাই ভবিষ্যৎ শব্দটি শুনলেই সেটা ঠিক নয় এমনটি ভাবা অনুচিত কাজ।
সকল ক্ষেত্রকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আলোকে সাজাতে হয়, এটাই নিয়ম, নাহলে কাজ গুলো সচল থাকবেনা। যেমন এস এস সি পরীক্ষা সকাল দশটায় হবে, আর জানাতে হয় কমপক্ষে একমাস আগে। আর এই জানানো মানেই ভবিষ্যৎ নয়। এই জানা নির্দেশ করে শুধুমাত্র কার্যক্রম গুলোকে। আর এই কার্যক্রম কে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কেউ মুখে বললেও তিনি তা কাজে প্রমানিত করতে পারবেননা। মসজিদে, মাদরাসায়ও এই ধরনের কার্যক্রম দেখা যায়, এই যেমন কালকে আসরের জামায়াত বিকাল পাঁচটায়। যাতে করে সবাই সচেতন হয়, প্রস্তুতি গ্রহণ করে তাই আগে জানাতে হয় এমন ধরনের ইনফামেইশান আগে জানানোটা কর্তব্য। এর মানে এই নয় যে এখানে ভবিষ্যৎ জানানো হয়েছে; এখানে কার্যক্রম জানানো হয়েছে। ইমাম নিশ্চয়ই যখন জামায়াত পাঁচটায় শুরু করবেন তখন জানাবেন না, কারণ সকল মুসল্লিরা তাহলে জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারবেন না।
আবার মসজিদের ইমামকে যেকোনো সময় পাওয়া যাবে এমন কোনো কথা নেই তি তাকে আগেই জানাতে হবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য। ডক্টারের কাছেও যেতে হলে আগেই জানাতে হয়, কারণ তিনি তার পেশা অনুযায়ী তার কার্যক্রম গুলো সাজিয়েছেন নাহলে তার কার্যক্রম গুলো সচল রাখা যাবেনা। রোগিদের মাঝে ঝগড়া বেধে যাবে। ডক্টাকে মানুষ দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাববেন। এখানেও তিনি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেননি আসলে তিনি তার পরিকল্পনা গুলো সাজিয়েছেন। তাই বলা যায়, মানুষ তার কার্যক্রম গুলো সাজায় ভবিষ্যৎ নয়। টিকিটও আমাদের আগে কিনতে হয়, আর এখানে টিকিট বিক্রেতা নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ বিক্রি করছেন না।
এমনকি অনেক ধর্মীয় দলের ক্যালিন্ডারে তাদের বার্ষিক মাহফিল, অনুষ্ঠান কবে তা ক্যালিন্ডারে আগেই উল্লেখ করেন, এখানে তারাও ভবিষ্যৎ বলছেননা, তারা আসলে কার্যক্রমগুলো বলছেন।
এখন আলোচনা করা যাক “গত একশত বছরে হয়েছে তাই আগামী একশত বছরে হতে পারে” এমন ধারণা করাটা আসলে একটা প্রক্রিয়ার অন্তর্গত বরং ভবিষ্যৎ নিয়ে মাখামাখি করা নয়। এমন ফর্মুলা আমরা আমাদের প্রতিটী ক্ষেত্রেই দেখতে পাই যা কোনো ফাউমুলা নয়; এর গুরুত্ব রয়েছে সমাজে, রাষ্ট্রে। গোয়েন্দা প্রক্রিয়াকে ভালো ভাবে বিশ্লেষণ করলে লক্ষ করা যায় প্রাথমিক ভাবে যে আগে করেছে কোনো অপরাধ তাকেই আটক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি অনেক কার্যকর। কোনো এলাকায় কোনো চুরি হলে, যে আগে চুরি করেছে তাকেই আগে সন্দেহ করা হয় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় চুরি সেই চোরই করেছে। এই গোয়েন্দা, অপরাধ প্রক্রিয়া প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে এবং এটা অনেক কার্যকারী প্রক্রিয়া।
প্রাকৃতিকভাবে আলোচনা করতে গেলে, গরমে গরম পড়ে আর শীতে শীত। এই তথ্য মানুষ কিভাবে জানে! মানুষ তার ইতিহাস থেকেই জানে। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ইসলাম এটা সমর্থন করে কিনা, এবং উত্তর দেওয়া হয় না তাহলে সেটা দুঃখজনক। তাহলে এই যে আগেই হয়ে এসেছে তাই এইবারো এমন হবে এই ধারণা নতুন নয়, অনেক পুরাতন পদ্ধতি যা মানূষ কে করতেই হয়। মুখে না করলেও মগজে অবশ্যই করে যদি সেটা সচল থাকে। শীতে শীত পড়ে কারণ এমন ভাবেই এটা কাজ করে, যদি এটা এমনভাবে কাজ না করতো তাহলে মানুষের বেশি কষ্ট হতো। এমন চিন্তা করতেও ভয় লাগার কথা। তাই নিশ্চ্যয়ই এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটা বড় নিয়ামাত। নদীর ঢেউ দেখেই প্রকৃত লঞ্চ চালক বুঝতে পারেন যে লঞ্চের সামনে কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা! এখন কয়েক মিনিট আগে থেকে ঢেউ দেখে যদি কেউ ধারণা করে লঞ্চ ডুবতে চলেছে তাহলে এর এই নয় যে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি তার কার্যক্রম গুলো সাজাচ্ছেন। কারোণ এটা এভাবেই কাজ করে, মগজ এভাবেই কাজ করে। মানুষ চিন্তা এভাবেই করে থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম পরিষ্কার ভাবে লক্ষ করা যায়। কখন, কোথায়, কার সাথে দেখা করতে হবে, মিটীং হবে, যেতে হবে সব কিছু আগে থাকতেই নির্ধারণ করতে হয়। যেমন সিলাবাস, পরীক্ষার সময়সূচী, ক্লাসের সময় ইত্যাদি জিনিস। এখন কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে অফিস কয়টায় আর যদি আরেকজন উত্তর দেয় সকাল এগারোটায় এবং বলেন মিটিং সবসময় এমন সময়ে হয়ে থাকে তাই আগামীকালকে মিটিং এগারোটায় হবে তাহলে নিশ্চয়ই তিনি ভুল কিছু বা ভুল যুক্তি দেননি; কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে ভিন্ন পর্যালোচনা।
সামাজিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পূর্বে হয়েছে তাই এবার বা সামনে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ধারণা পরিলক্ষিত। যেমনঃ কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান, পারিবারিক দাওয়াত, প্রতিবেশীদের মধ্যে জগড়া ইত্যাদি ঘটনায় “আগে হয়েছে তাই এমন হবে, হলে কী করত হবে’ এই তত্ত্ব পরিলক্ষিত। মানসিকভাবেও এমন ভাবেই মানুষ চিন্তা করে থাকে। বেশি পরিমাণে মাছ কিনলে স্ত্রী ঘ্যান ঘ্যান করে তাই পরের বার মাছ কেনার আগে ক্রেতা নিশ্চয়ই ভাববে। এর মানে এখানে ‘হয়েছে, তাই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে’ পরিলক্ষিত।
চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় এমন চিন্তার বিকাশ দেখা যায় ইনহেইলার ব্যবহারের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা এভাবেই কাজ করে। তাই কেউ যদি বলে, ইনহেইলার ব্যবহার করার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট কমে যাবে কারণ আগেও এমন হয়েছে তাহলে এর মানে এই না যে তিনি ভবিষ্যৎ জানেন বা ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করছেন!
সুতরাং, পরিশেষে বলা যায় যে কোনো নেতা, রিসারচা, ব্যাক্তি, চিকিৎসক, সংস্থা, দেশ বলে ‘গত একশত বছরে একবার কর মহামারী দেখা দিয়েছে তাই আগামীতেও দেখা দিতে পারে’ তাহলে সেটা ইসলাম ধর্ম অসমর্থন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ এখানে পরিকল্পনা, পূর্বাভাস, কার্যক্রম, সতর্কতা, গবেষণা নিয়ে বলা হয়েছে আর এগুলো আগেই বলতে হয়, এভাবেই কাজ করে। যেমন একজন বাবা তার কন্যাকে বলে সাবধানে থাকতে, অপরিচিত ব্যাক্তির কাছ থেকে কিছু না খেতে। মা তার বাচ্চাকে যেভাবে হাটা শেখান, বাচ্চার চারপাশে হাতের বেষ্টনী দিয়ে রাখেন যাতে করে বাচ্চা পরে গিয়ে ব্যাথা না পায়। এর মানে এই নয় যে, সবাই ভবিষ্যৎ জানে বা ভবিষ্যৎ নিয়ে বলছে। আমার মতে, এখানে অসমর্থন করার কোনো কারণ নেই বরং ইসলাম একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সমর্থন, অনুপ্রাণিত করে।
উন্নত দেশ, জাতি শুধুমাত্র পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়ন করে। তারা অহেতুক ভবিষ্যৎ নিয়ে মাখামাখি করেনা, তাই তো তারা এগিয়ে।