Last Updated on August 19, 2023 by SM Toukir Ahmmed
ইজ্রেইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো খিলাফাতকে দুর্বল করে দেওয়া। প্রতিটি পরিকল্পনার পিছনে ‘টেইবিলের নিচের’ কিছু উদ্দেশ্য থাকে। যে উদ্দেশ্যগুলো মগজে থাকে, কাগজে নয়। প্রতিটি উঠতি সুপার পাওয়ার কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে অপর জাতি, রাষ্ট্রকে দুর্বল বা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যাদের সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন সংঘর্ষ, প্রতিযোগিতা, হিংসা প্রায় সব ক্ষেত্রেই সব সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত। খিলাফাত হলো সেই চূড়ান্ত সময়, চূড়ান্ত দেশ, চূড়ান্ত আয়তন যা উম্মাহকে মাজবুত করার মাধ্যমে ‘গৌল্ডেন এইজ’কে নির্দেশ করে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক, ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী হওয়াকে যেখানে বিজ্ঞানের উপস্থিত থাকবে।
ইজ্রেইল রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর খিলাফাতের কার্যক্রম অনেকটা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ইজ্রেইলের পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইজ্রেইল এবং একজন আরেকজন দ্বারা। তবে সম্পূর্ণ দোষ ইজ্রেইলের উপর চাপানোটা অন্যায়। যদিও ইজ্রেইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই খিলাফাত দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো তারপরও ইজ্রেইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা পরোক্ষ ও প্রত্যেক্ষভাবে প্রভাবিত করছে তাদের কার্যক্রম দ্বারা।
আমার মতে, ইসলামী রাষ্ট্র এবং খিলাফাতের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষভাবে আয়তনগত তফাৎ উল্লেখ করা আবশ্যক। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রগুলোর আয়তন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেকোনো রাষ্ট্র আয়তনের ক্ষেত্রে নির্ভরশীল নয়। একটি রাষ্ট্র যেকোনো আয়তনের হতে পারে, এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আয়তনের হতেই হবে এমন কোনো আবশ্যকতা-বাধ্যবাধকতা নেই; যদিও আয়তন অনেকাংশে জাতি, রাজনৈতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক শক্তি, নেতৃত্ব, রাজনীতি, প্রতিবেশী ইত্যাদি জিনিসের উপর নির্ভরশীল। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম আয়তনের রাষ্ট্র হচ্ছে ভ্যাটিকান সিটি যার আয়তন মাত্র ০.৪৯ ব.কি.মি.। বাংলাদেশের কাছাকাছি ছোটো রাষ্ট্রের পরিষ্কার উদাহরণ হলো মলডীভ্জ, যার আয়তন মাত্র ৩০০ ব.কি.মি.। আয়তনের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র হিসেবে ভ্যাটিকান সিটি বা মলডীভ্জ ব্যর্থ রাষ্ট্র সে দাবি নিশ্চয়ই করা যাবেনা। তাই বলা যায় আয়তন, সম্পদ, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি উপর ভিত্তি করে হয়তো ছোটো রাষ্ট্গুলোকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু রাষ্ট্রগুলো যে অকার্যকর তা দাবি করা ভিত্তিহীন দাবি। আবার আয়তনের দিক থেকে বড় রাষ্ট্রগুলো, উদাহরণ হিসেবে রাশা, ক্যানাডার নাম উল্লেখ না করলেই নয়। রাশার ও ক্যানাডার আয়তন হলো ১৭,০৯৮,২৪২ ও ৯,৯৮৪,৬৭০ ব.কি.মি.। বিশেষভাবে উল্লেখ করা বাঞ্চনীয়, বর্তমান সময়ে বিশাল আয়তনের রাষ্ট্রগুলোই সুপার পাওয়ার হিসেবে গণ্য; আয়তনের সাথেও সম্পদ, টেকনোলোজি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা আবশ্যক সুপার পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে মেরিকা ও চাইনা সঠিক উদাহরণ, যারা তাদের আয়তনের যথার্থ ব্যবহার করছে। বিশ্বে ছোটো, মঝারী ও বড় সব রাষ্ট্রেরই উপস্থিতি রয়েছে। রাষ্ট্রের আয়তনের সাথে স্বাভাবিকভাবেই সম্পদ এর সম্পর্ক রয়েছে। একইভাবে খিলাফাতের সাথে রাষ্ট্রের ন্যায় আয়তনের সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্র এর উপর শুধুমাত্র আয়তন এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা , অপরদিকে শুধুমাত্র আয়তন এককভাবে খিলাফাতের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আদর্শগতভাবে, ধর্মীয়ভাবে ও সত্যিকারভাবে কার্যকারী খিলাফাত কখনোই স্বল্প আয়তনের ছিলোনা। খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার সময়ে স্বাভাবিকভাবেই এর আয়তন পূর্ণ খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার আগে কিছুটা কমই থাকবে। তবে প্রতিষ্ঠাকালে স্বল্প আয়তনের হলে খিলাফাত তার প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা দিনদিন কমতে থাকবে। কারণ কোনো সুপার পাওয়ারই তার জমি বৃদ্ধি করতে চায়, কমিয়ে ফেলতে চায়না।
রাশিদুন খিলাফাতের আয়তন ছিলো আনুমানিক ৬৪,৪০০,০০০ ব.কি.মি. ও উমাইয়া খিলাফাতের আয়তন ছিলো ১১,১০০,০০০ ব.কি.মি.। ইসলামী রাষ্ট্র খিলাফাতকে নির্দেশ করেনা কারণ খিলাফাত ইসলামী রাষ্ট্র অপেক্ষা শক্তিশালী। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্র উম্মাহকে ধারণ, ইউটালাইজ করেনা। খিলাফাত গড়ে ওঠে উম্মাহকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো জাতিকে কেন্দ্র করে নয়। আমার মতে এজন্যই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘উম্মাহ’র কথা বলেছেন, উম্মাহর উপরে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও সেখানে ক্যাপিটালিজমের খপ্পরে পড়ে ন্যাশনালিজমকে বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একমাত্র খিলাফাত প্রতিষ্ঠা ছাড়া উম্মাহকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন সাধন করা প্রায় সম্ভব। কারণ, রাষ্ট্র মানেই কিছু আয়তন, কিছু জনগণ, নির্দিষ্ট জাতি। খিলাফাতের মধ্য দিয়ে সময়ের সাথে সাথে মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বললে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অনেক রাষ্ট্রের সমন্বয়ের মাধ্যমে মেরিকা আজ সুপার পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার একত্রিত রাষ্ট্রগুলো ভেঙে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো।
খিলাফত নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই এর আয়তন নিয়ে আলোচনা করা আবশ্যক। আমি মনে করি, খিলফাতের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে এর আয়তনের উপর। খিলাফতের আয়তন নির্ধারণ উম্মাহকেই করতে হবে। আমরা খবর শুনতে পাই, কে বা কারা কোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে কয়েক হাজার বা তার চেয়ে সামান্য বেশি আয়তন জমি দখল করে খিলাফাত ঘোষণা করে। দুখজনক হলেও সত্যি খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করা এতো সহজ নয়। কিন্তু আমি আবার বলতে চাই, কয়েক হাজার জমি দিয়ে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য নূন্যতম এক কোটি ভূমির প্রয়োজন হবে। আমার মতে নূন্যতম এক কোটি ভূমি ব্যাতিত যে কেউ খিলাফাত বললেই খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হবেনা। সেই খিলাফাত নামে কার্যকর হবে কিন্তু কামে নয়। খিলাফাত তখনই সফল হবে যখন এর আয়তন কয়েক কোটি হবে। এখানেই খিলাফাত এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা, পার্থক্য। কারণ হাজারের কম আয়তনের রাষ্ট্র কার্যকারী রাষ্ট্র হওয়ার যোগ্যতা, সক্ষমতা রাখে, রাষ্ট্রে কমবেশি সবাই সুখে থাকে, সব কিছু সচল থাকে কিন্তু এই এক হাজারের কম আয়তনের খিলাফাত কার্যকারীভাবে কয়েক বছরও টিকে থাকবেনা। সেই পরিমাণ সক্ষমতা ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য খিলাফাতের আয়তন হতে হবে নূন্যতম ৯০,০০০,০০ ব.কি.মি.। রাষ্ট্রের সাথে খিলাফাতকে গুলিয়ে ফেলা যাবেনা। আর এই আয়তন অর্জনের জন্য নিশ্চয়ই যুদ্ধ, মারামারি, হানাহানি করতে হবেনা কারণ খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য নূন্যতম যে আয়তন লাগবে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ আয়তন মুসলিম রাষ্ট্রের আগে থেকেই রয়েছে কিন্তু খিলাফাতের নেই। এতো পরিমাণ আয়তনের প্রয়োজনীয়তা কেনো রয়েছে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য সে বিষয়ে আলোকপাত করা অত্যাধিক আবশ্যক। স্বাভাবিকভাবে অধিক আয়তন মানে অধিক সম্পদ। আর এই সম্পদ কি পরিমাণের হবে তা মেরিকা, চাইনাকে বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে আরো সহজ হবে। এতো সম্পদ, এতো আয়তন কেনো লাগবে খিলাফাতের জন্য! কারণ খিলাফাত মানেই সুপার পাওয়ার আর সুপার পাওয়ার মানেই অধিক আয়তন।
যিনি খালিফা হবেন, যারা খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করবেন তাদেরকে অবশ্যই খিলাফাতের আয়তন নির্ধারণ করতে হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মুখস্তবিদ্যার উপর ভিত্তি করে নয়। যখন মুসলমানরা খিলাফতের আয়তন কতো গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করতে পারবেন তখনই বুঝতে হবে মুসলমানরা এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে খিলাফাতের দিকে। আয়তনের মূল্য বুঝতে পারা এবং নির্ধারণ করতে পারাই হলো খিলাফাত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। আমার মতে, পবিত্র মক্কাকে কেন্দ্র করে খিলাফাতের ভিত্তি গড়ে উঠলে সেটা কার্যকারী বেশি হবে; এর মানে এই নয় যে এখনই পবিত্র মক্কার শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
কোনো সুপার পাওয়ার যদি চায় খিলাফাতকে রুখে দিতে, মুসলমানদেরকে আবার সুপারপাওয়ার হিসেবে পুনরায় না দেখতে, তাহলে এক্ষেত্রে “ডান হাত” হিসেবে ভূমিকা রাখবে ইজ্রেইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীদের মানসিকতা এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিলো যে তাদের নিজেদের নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে মুসলমানদের খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা অধিকতর সহজ। খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় বাঁধা দানকারী একমাত্র ইজ্রেইল রাষ্ট্র হবে ব্যাপারটা এমন নয় তবে ইজ্রেইলকে ব্যবহার করা অধিকতর সহজ মুসলমান এবং বিশ্বের চোখে ধূলা দেওয়ার জন্য। মসুলমানরা একত্রিত হিসেবে পাওয়ারফুল ছিলো উসমানীয় সাম্রাজ্য পর্যন্ত। এমন একক শক্তিকে ভয় পায় যেকোনো সাম্রাজ্য, সুপার পাওয়ার। আর এমন একত্রিত শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়াই হলো অপর সাম্রাজ্য, সুপারপাওয়ারের কাজ। এমন একত্রিত শক্তিকে রুখে দেওয়াই উদ্দেশ্য থাকে অপর প্রতিযোগিদের। এক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধ, ধর্ম, কৌশল, কূট চাল ইত্যাদি জিনিসের মাধ্যমে অপর একত্রিত শক্তিকে দুর্বল করে দিয়ে থাকে। আমার বিশ্লেষণে, ইজ্রেইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পিছনে শুধুমাত্র মানবিকতা, দয়ামায়া, ভালোবাসা ছিলোনা। মুসলমানরা যাতে করে আবার একত্রিত শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারে সেই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইজ্রেইল রাষ্ট্রের সৃষ্টি। বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একত্রিত শক্তিকে সাম্রাজ্যবাদীরা ভয় পায়, তারা এই ভয়ে থাকে যে “তারা না আবার শক্তিশালী হয়ে যায়, যেভাবে তারা শক্তিশালী ছিলো“। এখানে উল্লেখ করা উচিত যে, পাশাপাশি মুসলমান রাষ্ট্র থাকা মানেই একত্রিত থাকা নয়, একত্রিত শক্তি নয়। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের একার একত্রিত মুসলমানদের অর্থনীতি বর্তমান মেরিকা, চাইনাকে ছাড়িয়ে না গেলেও অর্থনীতির আকার একেবারে কম হতোনা। যার মাধ্যমে মুসলমানরা আর্থিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারতো। আর স্থিতিশীলতা, পরিকল্পনা, বিজ্ঞানের মাধ্যমে নিশ্চয়ই সময়ের সাথে সাথে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পেতো।
মূল কথা হলো সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলামানদের একত্রিত শক্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য এমন পরিকল্পনা এবং পদ্ধতির সন্ধান করতে থাকলো যার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে রুখে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। আর এমন সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার দ্বারা অন্যায়ভাবে ইহুদী নিধনের ফলে সকলের মনে ইহুদীদের জন্য আলাদাভাবে সহানুভূতি ছিলো। আবার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিকভাবে ইহুদিরা ছিলো সবচেয়ে “বেস্ট” যাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের সমর্থনও থাকবে, মুসলমানদের সমর্থনও আদায় করে নেওয়া যাবে। এটা স্বাভাবিক এমনভাবে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রের অনেকেই “বিপক্ষে” থাকবে, আর এই “বিপক্ষে” থাকাকে কেন্দ্র করে ইজ্রেইল রাষ্ট্রের ঠুনকো নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা কায়েক করা যাবে সহজে। এমনকি বহু সাধারণ ইহুদীদের নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে তাদের ব্যবহার করা যাবে মুসলমানদের, মধ্যপ্রাচ্যের বিরুদ্ধে। তদের মনে ঘৃণার জন্ম দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের উদ্দেশ্য, স্বার্থ হাসিল করবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ…। এমনকি সাম্রাজ্যবাদীদের এই নগ্ন উদ্দেশ্য অনেক মুসলিমসহ অনেক ইহুদীরাও টের পাবেনা, তারা নিজেরাও ব্যবহৃত হবে । এক সাম্রাজ্য আরেক সাম্রাজ্যকে ভয় পায়, সেই সাম্রাজ্যকে অস্থিতিশীল করার জন্য সামান্য হলেও ভূমি খোঁজে যার প্রমাণ আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন, চাইনার সাথে দেখতে পাচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যে ইজ্রেইলের জন্মের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি! যদিও এখনকার সময়ে উপলব্ধি করা যায়, শুধুমাত্র সাম্রাজ্যকে নয় অনেক রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য তাদের অধীনস্ত, অন্তর্গত ভিন্ন জাতিকে স্বাধীনতার মূলা দেখিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত করা হয়, ব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য। মুসলমানরা কী অনুধাবন করতে পারবে সাম্রাজ্যবাদীদের এই পরিকল্পনা, কূট চাল?
সাম্রাজ্যবাদীরা খিলাফাতকে ভয় পায় কারণ হলো খিলাফাত একত্রিত হতে বলে, উম্মাহর কথা বলে, একত্রিত শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বলে, শুধুমাত্র ভোগ-বিলাসে লিপ্ত হতে বলেনা। সাম্রাজ্যবাদীরা একত্রিত হওয়ার কারনেই তারা আজ সুপার পাওয়ার, তারা সব দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে! উম্মাহ দুর্বল মানেই খিলাফাত দুর্বল, খিলাফাত শক্তিশালী মানেই ইসলামী রাষ্ট্র শক্তিশালী।
ইজ্রেইল সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও আমি ইজ্রেইলকে আঘাত, আক্রমণ, যুদ্ধ বা ধ্বংস করার সম্পূর্ণ বিপক্ষে। খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইজ্রেইলকে ধ্বংস করা বা ক্ষতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে এর সাথে প্যালেস্টাইনের পক্ষেও আমি। ইজ্রেইল যাতে করে নতুন করে ভূমি দখল করতে না পারে সেটা সকলের কাম্য। আমি যেসব রাষ্ট্র ইজ্রেইলকে ধ্বংসের কথা বলে তাদেরকে সমর্থন করিনা এবং ইজ্রেইল দ্বারা ভূমি, জমি দখল করাও সমর্থন করিনা। ইজ্রেইলের জন্ম যেকারণেই হোক না কেনো, যারাই করে থাকুক না কেনো আর যেভাবেই হয়ে থাকুক না কেনো ইজ্রেইলের জনগণকে আমি সম্মান করি এবং প্যালেস্টাইনের জনগণও যাতে করে সম্মানের সাথে বসবাস করে– এটাই আমি আশা করি। ইজ্রেইল ইজ্রেইলের মতো আর উম্মাহ উম্মাহর মতো থাকুক এটাই আমি চাই এবং এর জন্য কাজ করতে আগ্রহী। উম্মাহ ধ্বংস করে হয়না, উম্মাহ একসাথে হয়, একসাথে করে।