Last Updated on July 30, 2024 by SM Toukir Ahmmed
অনেক মানুষ মারা গেলো, আর অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ হলো, জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, গাড়ি, বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হলো, লুটপাট করা হলো এসবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড় আধাসামরিক বাহিনী কে সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি, বা তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতো বড় বাহিনী কিন্তু তাদের কে স্থাপনার ও অন্যান্য জায়গার নিরাপত্তার কথা ভেবে মোতায়েন করা হয়নি যার পরিণাম দেশের মানুষ এবং সরকারকে ভোগ করতে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির আগেই সরকারের উচিৎ ছিলো তাদের কে মোতায়েন করা, পাহারায় বসানো কারণ যেকোনো সুযোগ পেলেই এমন আক্রমণ যে হবে তার আভাস কয়েক মাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিলো যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কিছু আয়গায় হামলা ও ডাকাতির চেষ্টা করা হয়েছিলো। সরকারকেই অবশ্যই গোয়েন্দা বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কেউ সতর্ক করেছিলো যে এমন হামলা, আক্রমণ হতে পারে যেকোনো পরিস্থিতিকে পুঁজি করে। আন্দোলনরত কেউই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো না, কেউ বা কারা ছিলো যারা দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, লুট করে নিয়ে গিয়েছিলো। অথচ এমন আক্রমনের আভাস কয়েক মাস আগে থাকতে পাওয়া সত্ত্বেও আনসার বাহিনিকে মোতায়েন করা হয়নি, পাহারায় বসানো হয়নি। সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
আনসার সদস্যদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার প্রশ্নই ওঠেনা, এমনকি তাদের সদস্যও মারা গিয়েছে তা আমি জানি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির জন্যই আধাসামরিক বাহিনী কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, গড়ে তোলা হয় যাতে করে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করতে পারে। যেভাবে আক্রমণ হয়েছে স্থাপনার উপর, অফিস, বাস ডিপো, কার্যালয়, টৌল প্লাজা, মেট্রোরেইলের স্টেশন, কাউন্টার ও বাস, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তা আনসার সদস্যরা প্রতিরোধ করতে পারতেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি। অন্ততপক্ষে তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে পারতেন বিটিভি, অফিস আদালাত কার্যালয়, কারাগার ও ইত্যাদি স্থাপনায় আক্রমণের বিপক্ষে। এতো বিশাল সংখ্যার আন্সার সদস্যকে কাজে লাগানো হয়নি সেক্ষেত্রে আইনী বা অন্য জটিলতা ছিলো কিনা আমি জানি না। যদি এমন জটিলতা বা প্রশিক্ষণ বা যেকোনো ধরনের দুর্বলতা, জটিলতা থাকে তাহলে এখনি সময় তা কাটিয়ে ওঠার, এখনি সময় প্রস্তুতি নেওয়ার। আমার বিশ্বাস তারা অবশ্যই আক্রমণ থেকে বেশিরভাগ স্থাপনাকে রক্ষা করতে পারতেন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারতেন। কারণ যারা আক্রমণ করেছিলেন তাদের সকলের হাতে ভয়ানক অস্ত্র ছিলো এমন না, তারা কোনো বিদ্রোহী সামরিক বাহিনী বা গোষ্ঠীও ছিলো না। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ইত্যাদি বাহিনী ব্যস্ত ছিলো আর এই সুযোগে অনেক স্থাপনায় এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিস, পুলিশ বক্স, সরকারি দপ্তর ইত্যাদি জায়গায় হামলা হয়েছে যা সব কাভার করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের এবং দুনিয়ার মধ্যে সব চেয়ে বড় আধাসামরিক বাহিনী আনসার কে কাজে লাগানো উচিৎ ছিলো। তাদেরকে সেভাবে কাজে লাগানো হয়নি, মোতায়েন করা হয়নি স্থাপনা, জায়গার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেটা কয়েক মাস আগে থাকতে হোক বা ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে হোক । সরকারের এব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ এবং এরপর থেকে বিশাল আধাসামরিক বাহিনীকে যাতে করে এমন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদানের মতো পরিস্থিতিসহ অন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টার ঘটনা ঘটছে, কুকিচিন নিয়েও সেনাবাহিনী, যৌথ বাহিনী অভিযানে ব্যস্ত রয়েছে। এছাড়া সেইন্ট মারটিন’জ আইল্যান্ড ঘিরেও উত্তেজনা কমছেই না। কিছুদিন আগেও দেখলাম মায়ানমার থেকে গুলি করা হয়েছে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে বিকল্প রূটে চলা ট্রলারগুলোকে লক্ষ করে। এমতাবস্থায়, আধাসামরিক বাহিনীকে উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করা এবং ব্যবহার করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে এতো বিশাল আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে দেশের মানুষ পুরোপুরি উপকৃত হবে হবে না।
সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেটঁ ছিলো না আমি টিভিতে প্রচারিত সংবাদ আর পত্রিকার মাধ্যমে যা দেখেছি আর যা জেনেছি তার প্রেক্ষিতে কথাটি বললাম। এব্যাপারে ভুল বলে থাকলে আমি দু;খিত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকারের নমনীয়তা লক্ষ করেছিলাম, সরকার নমনীয় মানে আওয়ামী লীগ নমনীয়। সেই কারনে পুলিশবাহিনীকেও নমনীয় দেখেছিলাম। ২০১৮ সালেও এমন আন্দোলন হয়েছিলো। শুরুতে তখনকার চেয়ে এখনকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যাপারে সরকার নমনীয় ছিলো এবং তাদের সমর্থন ছিলো বলেই আমি মনে করেছিলাম। আমার ধারণা ছিলো ছাত্র সমাজের সাথে সম্পর্ক ভালো করার জন্যই সরকারের এমন নমনীয়তা আর সমর্থন ছিলো এই আন্দোলনের ব্যাপারে। বিশেষ করে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন (যেটা খুবই সাধারণ, যৌক্তিক আর স্বাভাবিক আন্দোলন) এর ব্যাপারে নমনীয়তা প্রকাশ করে দাবি মেনে নেবে সরকার, আমার ধারণা এমনই ছিলো, সেক্ষেত্রে সরকারেরও এমন আগ্রহ লক্ষ করেছিলাম আমি নিজে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে উত্তেজনা লক্ষ করেছিলাম মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত। তখন সরকার দাবি মেনে নিয়েছিলো বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের। সেই হিসেবে এই কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পূর্ণ আলাদা দাবি বলে আমি মনে করি ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে।
কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের মনোভাব ইতিবাচক ছিলো, আদালতও পূর্বের রায় স্থগিত করে এক মাস পর পরিপূর্ণ রায় দেবে এমনটা জানিয়েছিলো। আকার-ইঙ্গিতে সেই রায় অনেকাংশে আন্দোলনকারীদের পক্ষেই যাবে আমার মনে হয়েছিলো। তবে আন্দোলনকারীদের ভাষায় মনে হলো যে তারা আসলে যতো সম্ভব সব কিছু দ্রুত হোক এমন্টাই চায়। এব্যাপারে আমার কিছুটা অবাক লাগলেও আন্দোলনকারীরা ২০১৮ সালে যা হতে দেখেছিলো তার কারনেই হয়তো তারা সব কিছু দ্রুত হোক তা চাচ্ছিলো। একারণেই হয়তো তারা রাস্তাঘাট বন্ধ করা, কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচী দিয়েছিলো। আমি প্রথম থেকেই আন্দোলনকারী এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা নিজের ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছিলো ত্যাদেরকে কোনো প্রকার উত্তেজিত হতে, মারমুখী অবস্থান নিতে দেখিনি। প্রথম থেকেই আমার আলাদা আগ্রহ ছিলো তাদের এমন ব্লক করা, রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নেওয়ার জন্য। শুরুতে সবার আচরণ স্বাভাবিক আর শান্ত থাকলেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি দেখা যাচ্ছিলো। এই ভুল বুঝাবুঝি চরম পর্যায়ে চলে যায় এক রাতেই । আমার আশা ছিলো রাতের ক্ষত কাটিয়ে সকাল্টা সুন্দর হবে, ভালো হবে, সকলের জন্য শান্তির হবে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটার ইচ্ছাই সকলের ছিলো। কিন্তু যে ভয় অনেকেই পাচ্ছিলো সে ভয়ই সত্যি হয়েছে পরে। আমি দুপুরে ঘুমিয়ে পরে রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা হয়েছে, আমি দুপুরের পর না ঘুমিয়ে কিছুটা গভীর রাতে না জাগলে ঘটনা কিছুই বুঝতাম না। ক্যাম্পাসে হামলা হয়েছে, এমনকি ছাত্রীদের গায়েও আঘাত করা হয়েছে এমন ছবি, ভিডিও দেখেছি টিভিতে, ফেইসবুকে, ইউটুবে এবং অনলাইন পত্রিকায়। হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে এবং সকল পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতেই থাকে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়। সকলের উপরই হামলা, সকলের মৃত্যুই কষ্টদায়ক এবং নিন্দনীয় ঘটনা। এমন সংঘর্ষ এড়ানো যেতো কিন্তু তা এড়ানো যায়নি এটা আমাদের সবার কাছে লজ্জার বিষয় । আমার নিজের বিশ্বাস ছিলো যে সরকার যেহেতু আগে থাকতেই অনেকটা ইতিবাচক ছিলো এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে সেহেতু কয়েক মাস আগেও যেভাবে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি ঘটনার ক্ষেত্রে ঠিক সেভাবে এবারো এমন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে সরকার এড়িয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে খারাপ পরিস্থিতি তো ঘটলোই, সেই সাথে এমন আক্রমণ, হামলা, সংঘর্ষ আর ভয়ানক রুপ আমি দেখিনি আমার বয়স বিশ হওয়ার পর থেকে। ভুল বুঝাবুঝি থেকে অনেক কিছু ঘটে গেলো যা কারোরই কাম্য ছিলো না। আমি নিজেও একবার আমার পরিবারের কাছের একজনকে ভুল বুঝাবুঝির কারনে রাগ করে বলেছিলাম যে খুন করে ফেলবো, এরপর তিনি রেগে গিয়েছিলেন আর আমিও আমার ভুল বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার চুপ হওয়া দেখে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য, যদিও আমি নিজেই বের হয়ে কয়েক ঘন্টা পর বাসায় ফিরে আসতাম যাতে করে কিছুটা সময় পাওয়া যায় পরিস্থিতি বুঝার জন্য, শান্ত হওয়ার জন্য; অতিরিক্ত রাগ হলে আমার মুখ থেকে খুন করে ফেলবো বের হয়ে যায়, এছাড়া আমার উত্তেজনা কমেনা। আমার এই দোষ আমার কাছের মানুষরা জানেন। সকলেরই দোষ আছে, থাকে যা থেকে ভুল বুঝাবুঝি হয়। এটা বলার কারণ হলো ভুল বুঝাবুঝি ঠিক করার জন্য সময়টুকুই কাউকে দেওয়া হয়নি। সরকার নিজেও সময় নেয়নি আর ছাত্রছাত্রীদেরকেও দেয়নি। পাল্টা বক্তব্য, স্লৌগান এর মধ্যে সীমিত রেখে ভুল বুঝাবুঝি অবসান করা যেতো কিন্তু এর আগেই আমি খবর পেলাম ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা হয়েছে। এরপর সংঘর্ষ, এই যে ভুল বুঝাবুঝি সেটা ঠিক করার জন্য যে পরিবেশ, ব্যাক্তি আর সময়ের প্রয়োজন ছিলো তার সব কিছুই মিসিং ছিলো। ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিলো শান্তিপূর্ণ, আহারে কিছু শব্দ মুহূর্তেই পাল্টে দিলো পরিস্থিতি অথচ শব্দ পর্যন্ত সীমিত না রেখে বাক্য এর মাধ্যমে যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু হলে সব কিছু ঠিক হয়ে যেতো, প্রতিটি পক্ষই সুখী হতো, চারিদিকে এতো রক্ত দেখতে পেতো না কেউ ।