Last Updated on July 7, 2024 by SM Toukir Ahmmed
কোভিড- ১৯ এর আগে ও পরেঃ বাইসাইকেল, ইনফেইলার এবং আমি
২০১৯ সাল পর্যন্ত আমার জীবন সরল ছিলো, এর আগে জীবনে অনেক কিছু হলেও জীবনে জটিলতা ছিলো না, ২০ সালের পর থেকেই জীবন জটিল হতে শুরু করে। যদিও তখন বিয়ের জন্য অপেক্ষা ছিলো, একজনের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম, একজনের মতের অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু জীবন জটিল ছিলো না। যারা সাংসারিক চিন্তাভাবনার মানুষ তাদের সংসার জটিল হলে সমস্যা কারণ তাদের “বাহিরে” যাওয়ার জায়গা নেই। আমি আগাগোড়া সাংসারিক ব্যাক্তি। এই যেমন একজন স্ত্রী, স্ত্রী বাদে অন্য কারোর সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ রাখার পক্ষেও আমি না। বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসারই আমার ইচ্ছা, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। যারা সাংসারিক না তাদের বরং জীবন জটিল হলে সুবিধা, এর উছিলা দিয়ে কয়েকজানের সাথে ফুর্তি করতে পারে। যদিও এসব উপলব্ধি থেকে বলা কারণ আমি বিবাহিত ছিলাম না বা কারোর সাথে সম্পর্ক ছিলো না। ১৭ সালে একজনকে ভালো লেগেছিলো যার গায়ের রঙ লাল ছিলো, আর তার পরিবারও আমাকে পছন্দ করতো, সেই হিসেবে অপেক্ষা করাটা দোষের কিছু ছিলো না। আবার তারা ধোকা দিয়েছিলো, জিনিস্টা এমনও না। তাদের সাথে আমার যোগাযোগই ছিলো না কোনো, এমনকি এটা তখন কেউ জান্তো না। আমি এই জন্য ২০ সালে বরিশালে আসার আগে ভেবেছিলাম তার চাচার সাথে যেহেতু চোখাচোখি হলো সেহেতু পরেরদিন তার সাথে কথা বললেই ভালো হয়। কিন্তু মহামারীর জন্য ভার্সিটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরেরদিনই বরিশালে চলে আসি।
এটা সত্যি জটিলতা আপনাকে আসল মানুষে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে।
১৯ সালে আমার গবেষণা নিয়ে আমি খুবই খুশি ছিলাম। তখন এতো বছরের কষ্টের পর ফল পেতে শুরু করেছিলাম নিজের কাছে। এই সালেই আব্দুল হাই শিকদার স্যারের মাধ্যমে একটা পত্রিকায় লেখা ছাপানোর চেষ্টা করি। পত্রিকার কলামে লেখা ছাপানোর ইচ্ছা ছিলো তখন, কোনো লেখা সবার কাছে পৌছানোর জন্য পত্রিকা দারুণ। যদিও কয়েকবার চেষ্টা করার পর না ছাপাতে পেরে পত্রিকায় ছাপানোর চিন্তা বাদ দেই। যদিও আমার এই পত্রিকায় লেখা ছাপানোর চেষ্টা প্রথমবার ছিলো না, আমি প্রথমবার লেখা ছাপানোর চেষ্টা করে ছিলাম ২০১৫ সালে। যদিও তখন আমার একটা বইও ছাপানোর চেষ্টা করেছিলাম, নিজের টাকায় ছাপাতে হবে জেনে ভেবেছিলাম, “শালারা বাটপার।”
২০২০ সাল এসে গেলো, সেই সাল যে সালে মহামারীর সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি আমি। সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। ২০ সালের প্রায় শুরুর দিকেই আমাদের বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের আয়োজনে বার্ষিক ভ্রমণে যাই সাজেক।
সাজেক থেকে ফিরে এসে জীবন একেবারে খারাপ যাচ্ছিলো না। একজনের সাথে মাসজিদে কথা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো কিন্তু বরিশালে চলে আসার কারণে তা আর হয়নি। ঐসব মহামারী ভুজুংভাজুং মনে করতাম। আর ভাবতাম বাংলাদেশ কোথায় আর মহামারী কোথায়! ফেব্রুয়ারি মাসে বের হলাম জমুনা ফিউচার পার্কে, আমি নামাজ ছাড়া আর ভার্সিটি ছাড়া তেমন একটা বের হতাম না। আমাদের মেসের পাঁচজনের জীবন ভালোই চলছিলো। যদিও এই দিনেই আমার ফৌন চুরি হয়ে গিয়েছিলো। খালিদ বন্ধু মৌবাল্টা পেতে সাহায্য করেছিলো।
২০২০ সালের মার্চে ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাবে, সংবাদে দেখলাম যে বাংলাদেশে ভাইরাস ধরা পড়েছে অনেকের শরীরে। আর পরিস্থিতি ভয়াভয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আমার ধারণা ছিলো যে কিছুদিন পরেই ছুটি শেষ হয়ে যাবে, এরপর আবার মেসে চলে আসবো। তাই এরপরের দিনই চলে গিয়েছিলাম মেস থেকে বরিশালের নিজ বাসায়। যদিও থাকার ইচ্ছা ছিলো খুব, আমি মহামারী কি তা সংজ্ঞায় জানতাম, প্র্যাক্টিকলি কি জিনিস স্বাভাবিকভাবেই তা জানতাম না। এটা যে ভয়াবয় জিনিস হতে পারে তাও জানতাম না, উপলব্ধি করতে পারিনি। বরিশালে এসেই আব্বুর বাটন ফোনে এই কবিতাটা লিখে ফেলি আর আমার ফেইসবুক আইডিতে পৌস্ট করি।
এর পরে বুঝতে শুরু করি যে এই ভাইরাস ভয়ানক পরস্থিতি বয়ে আনবে, আমি যে পরিবারের জন্য অপেকক্ষা করেছিলাম এই সময়ে তাদের জন্য চিন্তা হতো, আর ভাবতাম ঢাকা গিয়ে তাদের মত জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন টিভির চ্যানেলে চোখ রাখতাম, একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো এটা জানা যে কবে আবার ঢাকা যাবো! ঠিক তখনি দেশের কথা ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়া মাথায় আসে যা দেশের কাজে লাগলেও লাগতে পারে এমন ধারণাই ছিলোনা। যদিও আমি এম্নিতেই আইডিয়াটা ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলাম আব্বুর বাটোন মৌবাইল থেকে।
কেউ দেখবে বা পড়বে এই ইচ্ছা থেকে নয়, আমার দৌড় ফেইসবুক পর্যন্ত ছিলো তাই ফেইসবুকে পৌস্ট করেছলাম। একেবারে শূন্য এক্সপেক্টেইশান, শূন্য আয়োজন আর শূন্য ধারণা থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ কারোর চোখে আমার এই পৌস্ট পড়তে পারে অথবা কেউ গুরুত্ব দিতে পারেন! মাথায় আইডিয়া এসেছিলো তাই দেওয়া এর চেয়ে বেশি কিছুনা। আমি তাদের সম্মান করি, তাদের ব্যবহার, আচরণ ভালো ছিলো খুব গোপীবাগে, তারা এমন কিছু উপকার করেছেন আমার সাথে যোগাযোগ ছাড়া তার জন্য আমি তাদের আন্তরিকাভবে ধন্যবাদ জানাই। কোনো কারণে বিয়ে না হলেও আল্লাহ তাদের ভালো করুক আমি এই দুআ করি। আমরা যাদের ভালো চাই, আর যারা আমাদের ভালো চান, তাদের সাথেই সংসার করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। মাঝে মাঝে এতেই সম্মান বজায় থাকে আজীবন। এরপর দেখলাম সবাই হজ নিয়ে খুবই চিন্তিত, আবার অনেকেই দেখছি অনেক কথা বলছেন তাই ভাবলাম হজ নিয়ে আরেকটি আইডিয়া শেয়ার করি যদি কারোর কোনো কাজে লাগে!
নিজের আত্মজীবনী মূলক বই, তাই বলতে লজ্জা নেই যে আমার এই পৌস্ট যদি একটু হলেও উপকার করে হজের ক্ষেত্রে আর যদি কোনো দেশ বা হজের কোনো সংস্থা যদি বলেন যে এর বিপরীতে কি আপনি কিছু চান? আমি উত্তর দিবো আম্মু, আব্বুকে হজের বা উমরাহ করার অনুমতি দিলে খুশি হবো সম্পূর্ণ আপনাদের খরচে কারণ এখন আমি জব করি না, নাহলে নিজের খরচেই তাদের হজ করাতাম ।