Last Updated on September 3, 2024 by SM Toukir Ahmmed
জুলাগস্ট মাস ছিলো ক্ষমতার লড়াইয়ের মাস। এই লড়াইটা ছিলো কে কার চেয়ে ক্ষমতাবান তা দেখানোর মাস, সাধারণ জনগণ বেশি ক্ষমতাবান নাকি সরকার ক্ষমতাবান বেশি বা যে দল ক্ষমতায় আছে সেই দল ক্ষমতাবান বেশি। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষমতা দেখানোর প্রবনতা বেশি ছিলো শুরু থেকে, তবে এই ক্ষমতা দেখানোটা ইতিবাচক ছিলো, তারা চাচ্ছিলো যে সরকার তাদের দাবি মানে আওয়ামিলীগ তাদের দাবি মেনে নেবে যতো দ্রুত সম্ভব। ছাত্র-জনতা এমন ক্ষমতা দেখাতে পারে, এটা দোষের না, ছাত্রছাত্রী এমন আগ্রহ, এমন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেই পারে, তারা এমন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেই থাকবে। কোটা সংস্কার, কোটা আন্দোলন নতুন কিছু না, ২০১৮ সালে এমন আন্দোলনের সাথে আওয়ামিলীগ পরিচিত ছিলো, ছাত্রছাত্রীরা পরিচিত ছিলো। মানুষ ক্ষমতা দেখায় নির্বাচনের মাধ্যমে, তারা তাদের পছন্দের দল, লোক বাছাই করে নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই হিসেবে ৫ বছর পর পর জনগণ ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ পায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামিলীগ আর বিএনপি কে মানুষ পর পর দুবার ক্ষমতায় বসাতো না, মানুষ জানে আওয়ামিলীগ আর বিএনপির সম্পর্কে, এর আগে থাকতেই এটাও জানা কথা যে দুই দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে কখনোই মানুষ পুরোপুরিভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে যেতো না, নির্বাচন জমে উঠতো না। ছাত্রছাত্রীরা ইচ্ছা ছিলো সরকার ছাত্রছাত্রীদের দাবি দ্রুত মেনে নেবে, আর এটাও সত্যি যে আন্দোলন কয়েক সপ্তাহ শান্তিপূর্ণই ছিলো। তাদের মনে ক্ষমতা দেখানোর প্রবনতা ছিলো, এই হিসেবে তাদের ইচ্ছা ছিলো যে তাদের দাবি সরকার মেনে নেবে খুব দ্রুত। তারা দেখাতে চাচ্ছিলো যে সরকার তাদের আন্দোলনের জন্য তাদের দাবি দ্রুত মেনে নিয়েছে, আর তারা ক্ষমতাবান। ছাত্রছাত্রীদের এমন ইচ্ছা স্বাভাবিক, সেই সাথে এটাও মেনে নিতে হবে যে তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিলো, আর তারা যে পুলিশের গাড়ির উপর উঠেছিলো, সেটাকেও খারাপ বলা যাবে না। তখন পুলিশদের উপর আক্রমণ করা হয়নি, তাদেরকে অসম্মান করা হয়নি, পুলিশও চুপচাপ মেনে নিয়েছিলো। আমার যখন বয়স ১৭/১৮ ছিলো তখন আমারও পুলিশের এমন গাড়ি, বা সামরিক যে যানবাহন থাকে তার উপর ওঠার ইচ্ছা হতো খুব। এই আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী জড়ো হতে শুরু করে, তারা সমর্থন করা শুরু করে। তাদের মনের দিক থেকে ইচ্ছা ছিলো নিজেদেরকে ক্ষমতাবান হিসেবে উপস্থাপন করা শান্তিপূর্ণ ভাবে। যদিও তাদের মনে তাড়াহুড়ো ছিলো কিছুটা তবে এটাও সত্যি যে আন্দোলনের কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে এরইমধ্যে। এরপর এই আন্দোলনে যোগ দেয় জনতা, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, বাচ্চা আরো অনেকে বিশেষ করে রাজনৈতিকদল গুলো। তাদের ইচ্ছা ছিলো যে সরকার তাদের দাবি মেনে নেবে, বিশেষকরে ছাত্রছাত্রীদের দাবি ছিলো সরকার তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেবে। এই চাওয়াটাকে সরকার ভালোভাবে নেয়নি, তারা মনে করেছিলো যে আমাদের সাথে ক্ষমতা দেখায় কেনো তারা বা আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ কেনো করা হচ্ছে অথচ ছাত্রছাত্রীরা এমন দাবি, আন্দোলন করতেই পারে, জনতারাও চাইতে পারে, দাবি জানাতে পারে। এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার যে আওয়ামী সরকার এই চ্যালেঞ্জ কে গ্রহণ করতে পারেনি অথবা গতো ১৫ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে তাদের কাছে দাবি জানাতে পারে, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বা তাদেরকে ক্ষমতা দেখাতে পারে (সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে ক্ষমতা দেখানো) সেটা তাদের মগজে ছিলো না। এমন শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা দেখানো, সমর্থন জানানো আমরা ২০১৩ সালেও দেখেছিলাম শাহবাগের আন্দোনলের সময়ে আবার এটাও সত্যি যে আওয়ামি সরকারের মাথায় ছিলো আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা, আদালতের ক্ষমতা দেখানো যদিও আন্দোলনকারীদের ইচ্ছা ছিলো আদালতের না প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দেখার, তার ক্ষমতাবলে সব কিছু হোক। এটাও জানা কথা যে উত্তরের শব্দ নিয়ে ভুলবুঝাবুঝির পর পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে শুরু করে। অবশেষে জনগণ জিতে যায় ক্ষমতার লড়াইয়ের খেলায় যদিও এই খেলা শুরুতে কোটা আন্দোলন ছিলো, জনগণেরও ইচ্ছা ছিলো কোটা নিয়েই। অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, হতাহতের ঘটনা দেখে সরকারের পতন ঘটে।