Last Updated on November 2, 2021 by SM Toukir Ahmmed
আজ ২২ শে ফেব্রয়ারী নিরাশের মৃত্যু বার্ষিকী। প্রায় পাচঁ বছর হয়ে গেছে তবুও আমি নিরাশের স্মৃতি ভুলতে পারিনি।
ঐ দিনটির কথা আমার আজো মনে আছে যে দিন নিরাশ আমাদের বাসায় এসেছিলো শুধু মাত্র প্যান্ট পড়ে। আমাদের ঘরের বার বছরের পুরনো আসবাবপত্র আর আট বছরের পুরনো ছবিটি নিরাশের পনের বছরের চোখ কে কতোইনা উজ্জল করেছিলো। তখন বাসায় কাজের লোক পাওয়া টা ছিল অনেক কষ্টের। কিন্তু রহিমা কাকি মারা যাওয়ার পরের দিনই কাজের লোক পাওয়াতে আমরা সবাই আশ্চর্য হয়েছিলাম।
আমার ডিগ্রী প্রাপ্ত শিক্ষিত বাবা নিরাশের আসার প্রথম দিন নিরাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, “নিরাশ তুই কার টাকায় জন্মেছিস জানিস”?
জ্যা, জানি স্যার।
গুড বয়, তুই কি জানিস আল্লাহ্ কোরআন শরিফে বলেছেন “ঋণি ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনা “। তোর মা’যে…।
“স্যার, আমি জানি মা’য়ে কইছে আপনার ঋণ শোধ কইরা জাইতে।“
এই কথা শোনার পর বাবার হাসি দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম, কারণ সে হাসি ছিলো একজন শোষকের হাসি। আমি আরো হতবাক হয়ে যাই যখন দেখতে পাই মা হাসতে হাসতে বলতে লাগলেন, “অরে রায়হান তোর বাবা কোরান শরিফের নাম জানলো কি করে! তোর বাবাতো নাস্তিক”।
নিরাশ সারাদিন সারা রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছে মুখ বুঝে। সেই সাত সকালে শুরু আর মাঝ রাতে শেষ। শ্রমের বিনিময়ে বাবা নিরাশকে কয়েকটা পাঁচশ টাকার নৌট ধরিয়ে দিতেন।
দু’বছরের মাথায় একদিন দেখি বাবা নিরাশের কাছ থেকে ১২০ টাকা নিচ্ছেন। কারণ খোজ করতেই জানতে পারলাম এক গরমের দিনে আমার রুমে ফ্যানের নিচে নিরাশকে হাওয়া খেতে দেখে বাবা খেপে গিয়ে বলেছিলেন, “কিরে নিরাশ ফ্যানের নিচে কি করিস, বিল কি তোর বাপে দেয়?”
মুখ কাচুমাচু করে নিরাশ উত্তর দেয় “স্যার বেজায় গরম”।
আমার বিচক্ষন বাবা তখন নিরাশকে যেতে বলেন এবং আদেশ করেন কাল থেকে তুই প্রতিদিন দুঘন্টা করে ফ্যানের বাতাস পাবি।
যে বাতাসের কারণে নিরাশের ঘামযুক্ত শরীরে একটু শান্তির হাওয়া মিলতো সেই হাওয়া বাবদ, সেই শান্তি বাবদ নিরাশ বাবাকে ১২০ টাকা করে দিত প্রতি মাসে।
কিন্তু বেচারা নিরাশ বুঝতেই পারলনা ঐ শীতল বাতাস তার প্রাপ্য অধিকার, যে অধিকারের কোনো মুনাফা হয়না।
তার কিছুদিন পরে দেখলাম নিরাশ বাবকে আরো ৩২ টাকা দিচ্ছে। সেই কারনও অজানা রইলনা। সেই ৩২ টাকা ছিল টেলিভিশন দেখার এক মাসের বিল।
আরেক দিন শুনলাম বাবা নিরাশের বেতন নাকি কয়েক শত টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন, অথচ নিরাশ এটা বুঝলনা যে বাবা নিরাশের টাকা নিরাশকেই দিতেন, আর লাভের অংশটা রেখে দিতেন নিজের পকেটে।
সুযোগ সুবিধা বিনোদন আর বেতন পেয়ে নিরাশের কাজের গতি বেড়ে গেলো দিগুণ।
এক মাঝ রাতে বাবার চেবামেচি শুনে বাবার রুমে গিয়ে দেখতে পাই নিরাশ আর বাবা দুজনেই মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। হতাশায়, রাগে, খোভে, অভিমানে আমার হৃদয় ফেটে গিয়ে ছিল সেদিন।
আমার খুব ইচ্ছে ছিল বাবাকে জিজ্ঞেস করতে।ঐ লাল পানীয়র জন্য নিরাশের কাছে বাবা কত টাকা দাবি করেছিলেন?
আমার এই প্রশ্নের উত্তর না জানাই রইল কারন অতিরিক্ত মদ্য মানের জন্য বাবা আর নিরাশ দুজনেই অকালে মারা যান। মারা যাওয়ার আগে নিরাশ আমার কোলে মাথা রেখে বলেছিল “ সরকার বরই দরকার, ভাইজান“।